কানের পর্দা ফাটা একটা জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। দীর্ঘ শর্দি কাশি থেকেও অনেকের কানের পর্দা ফুটো হয়ে যেতে পারে। আবার আঘাত থেকেও পর্দা ফেটে যেতে পারে। এমন হলে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। সঠিক চিকিৎসা না পেলে বড় বিপদ হতে পারে।

কানের পর্দা ছিদ্র হওয়ার প্রধান কারণ কানের ইনফেকশন। পানি জমে এই ইনফেকশন হতে পারে। আবার আঘাতজনিত কারণে পর্দা ফাটা অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যদি এ সমস্যার ঠিকমতো চিকিৎসা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ছিদ্র এমনিতে সেরে যায়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইমপালস হসপিটালের নাক কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহীর আল-আমিন।

কেন পর্দা ফাটে

* বাতাসের ধাক্কা- কানের ওপর চড় মারলে যে বাতাসের চাপ হয় তাতে কানের পর্দা ফেটে যায়। কানের পাশে বোম ফাটলেও একই ক্ষতি হতে পারে।

* পানির ধাক্কা- পানির মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লে।

* শব্দের ধাক্কা- দেখা যায় কানের পাশে প্রচণ্ড শব্দ হলে কানের পর্দায় প্রদাহ হয়, কানের ভেতরে ছোট ছোট হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনকি কানে শোনার স্নায়ুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে।

* কানে সরাসরি আঘাত-দুর্ঘটনার সময় বা শক্ত কিছুর সঙ্গে কানে আঘাত লাগলে কানের আশপাশের হাড়, অথবা কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে টেম্পোরাল নামক যে হাড় থাকে তা ভেঙে যেতে পারে। এতে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কানের অন্যান্য সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি কানের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কের তরল পদার্থ সিসএফ লিক করতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে এ রোগীদের।

* কটন বাড বা ধারাল অন্যকিছু দিয়ে কান খোঁচানোর সময় হঠাৎ করে কেউ ধাক্কা দিলে পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়। যদিও এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, তবুও সমস্যাটি আমরা প্রায়ই দেখে থাকি।

কী সমস্যা হতে পারে

আঘাত পাওয়ার পর কানটি বন্ধ হয়ে যায় বা রোগী কানে কম শুনে। কানে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে, অনেক সময় কান দিয়ে রক্তও বের হতে পারে। এক্ষেত্রে কানের সঠিক চিকিৎসা না হলে দু-এক দিন পর দেখা যায় কান দিয়ে পুঁজ বা পানি বের হতে পারে।

কাদের এ সমস্যা হতে পারে

কানে সরাসরি আঘাতজনিত কারণে আঘাতের মাত্রা বেশি হলে যে কোনো কারণে পর্দা ফেটে যেতে পারে। বাতাস বা পানি বা শব্দের ধাক্কায় যখন কানের পর্দা ফাটে সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কানের পর্দা আগে থেকেই দুর্বল ছিল যেমন- ছোটবেলায় বারবার কান পাকা রোগ থেকে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে যায়, দীর্ঘদিনের টনসিল ও এডেনয়েড প্রদাহে ভোগা, নাকের হাড় বাঁকা, অনেক দিনের নাক ও সাইনাসে প্রদাহ ইত্যাদি। ইউস্টেসিয়ান টিউবের কাজ ঠিকমতো না হওয়ার কারণে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে যায়। এ দুর্বল পর্দা অল্প আঘাতেই ফেটে যায়।

কী করবেন

* কান শুকনা রাখতে হবে।

* কানের ভেতরে তুলা, কটনবাড, পানি কোনো কিছুই ঢুকানো যাবে না।

* কান ভেজা অবস্থায় মাথায় পানি ঢালা যাবে না।

* তুলায় তেলে ভিজিয়ে চিপে তেল ফেলে দিয়ে তা কানে দিয়ে গোসল করতে হবে।

* ভালো হয় মাথা ও শরীর আলাদাভাবে ধুয়ে-মুছে নিলে।

কান পরিষ্কার করা যাবে না

ডাক্তারদের উচিত এ রোগীদের সাক্শন না দেওয়া কান পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে দেখা যেতে পারে, এটা ছাড়া কানের ভেতরে কোনো ইন্টারভেশন পরিহার করে চলা উচিত। কান দিয়ে পুঁজ বের না হলে কানে ড্রপ দেওয়া নিষিদ্ধ। অনেক সময় আমরা ব্যথার জন্য, ব্যথানাশক ওষুধ দেই বা ইনফেকশন রোধে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি।

এই রোগীর প্রধান চিকিৎসা হল কানের ভেতর যাতে কিছু না ঢুকে এটা নিশ্চিত করা। এভাবে কানের পর্দাকে কিছু সময় দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যদি কানের পর্দায় ফুটা ছোট হয় তা এমনিতেই সেরে যায়। এ অবস্থায় কানের পর্দা কেমন থাকছে, সেজন্য সপ্তাহে নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

কানে কখনও ইনফেকশন হয়ে গেলে আমার অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেই, অনেকে আবার কানের পর্দা ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য নাক চাপ দিয়ে মুখ ফুলিয়ে কান দিয়ে বাতাস ছাড়ার চেষ্টা করে, এতে কোনো উপকার তো হয়ই না বরং দেখা গেছে, কানের পর্দা জোড়া লেগে গেলে নতুন পর্দা এ কারণে আবার ফেটে যায়। যদি আমরা নিয়মমাফিক চলি তাহলে ইনফেকশন ঠেকাতে পারি।

ছোটখাটো পর্দার ছিদ্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট হয়ে যায়। যাদের নাক, সাইনাস, টনসিল ও এডেনয়েডের প্রদাহের কারণে কানের পর্দা দুর্বল হয়ে গেছে, কানের পর্দা ফেটে গেছে, তাদের কানের পর্দার সমস্যার সঙ্গে এসব সমস্যার চিকিৎসা করা জরুরি। এক মাসের মধ্যে যদি এ সমস্যার সমাধান না হয় তবে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

একে টিমপেনোপ্লাস্টি অপারেশন বলা হয় এবং এটা একটা মাইক্রোসার্জারি যা মাইক্রোসকোপের সাহায্যে অতি সূক্ষ্মভাবে করা হয়ে থাকে। কানের ভেতরে যত ইনফেকশন হবে এবং ইনফেকশনের জন্য কানের পর্দায় যে পরিবর্তন হবে তাতে অপারেশন জটিল হতে পারে এবং কানের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

 

কলমকথা/সাথী